ডনোভান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মাদারীপুরের তথা বৃহত্তর ফরিদপুরের একটি অতুলনীয় বিদ্যাপীঠ। একে দক্ষিণাঞ্চলের নারী শিক্ষার অগ্রদূত বললেও অত্যুক্তি হবেনা। শত বর্ষে পদার্পনকারী এই বিদ্যালয়টি যুগ যুগ ধরে শিক্ষিত নারী তথা শিক্ষিত সমাজ গড়ার স্বাপিড়বক চেতনায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের একটি অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয় হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টি তার সূচনালগড়ব থেকেই সৎ, আদর্শ ও নিষ্ঠাবান আলোকিত মানুষ গড়ার ব্রত নিয়ে প্রতিটি কার্যক্রম সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পালন করে আসছে। ফলশ্রুতিতে এই বিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী নিজ মেধা, যোগ্যতা ও মননশীলতায় দেশ-বিদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বিদ্যালয়টিতে একটি দ্বিতল ভবন ও একটি তিন তলা একাডেমিক ভবন আছে। দুই ভবনের মাঝখানে একটি প্রশসত্ম খেলার মাঠ এবং মাঠের পূর্বপাশে বড় একটি পুকুর আছে। বিদ্যালয়ের তিন তলা ভবনের নিচতলা প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের একটি ছাত্রী হোস্টেল, ডরমেটররি ও প্রধান শিক্ষকের বাস ভবন আছে। এখানে প্রভাতী ও দিবা শিফ্ট চালু আছে। উভয় শিফটে ৪র্থ শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যমত্ম পাঠদান করা হয়।
বিদ্যালয়ের শুভ যাত্রা শুরু হয় ১৯১৪ সালে। তৎকালীন মহাকুমা প্রশাসক মিঃ জেটি ডনোভান সাহেব ছিলেন বিদ্যানুরাগী ও তৎকালীন নিঃস্ব, রিক্ত, নিরক্ষর ও অবহেলিত মুসলমানদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তাঁরই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের নামটি ‘‘ডনোভান’’ কিভাবে হয়েছিল তা নিয়ে অভিজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কারো কারো মতে তৎকালীন মহুকুমা প্রশাসক বৃটিশ নাগরিক মিঃ ডনোভান সাহেবের উদ্যোগে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তার নামানুসারেই বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়। আবার অন্যদের মতে, ডনোভান ছিলেন এস.ডি.ও সাহেবের স্ত্রীর নাম।
বিদ্যালয়টি বর্তমানে যেখানে অবস্থিত, প্রতিষ্ঠার সময় উহা এখানে ছিল না। প্রথমে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল লক্ষীগঞ্জ নদীর পাড়ে। চরমুগরিয়া যাবার পথের পাশে ছিল স্কুলটি। মাদারীপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাহাদাত হোসেন হাওলাদার (তোতা হাওলাদার) এর কাছ থেকে জানা যায় তখন বিদ্যালয়ের সামনে বিশাল দুটি ময়ূরের ছবি আঁকা ছিল বলে তিনি শুনেছেন। পরে নদী ভাংগনের কারণে বিদ্যালয়টি হাইক্যারমার ঘাট এলাকায় সরিয়ে আনা হয়। তৎকালীন ইসলামিয়া বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে স্থাপিত হয়েছিল বিদ্যালয়টি। ইসলামিয়া বিদ্যালয়টি পরবর্তীতে মাদারীপুর বিদ্যালয়ের সাথে একীভূত হয়ে মাদারীপুর ইউনাইটেড ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিণত হয় এবং ইসলামিয়া বিদ্যালয়ের স্থানে প্রতিষ্ঠা করা হয় নাজিমউদ্দিন মহাবিদ্যালয়। ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায় বিদ্যালয়ের নামে সেখানে এখনও এক একরের অধিক জমি রয়েছে। যাহা বিভিন্ন অবৈধ দখলদারেরা ভোগ দখল করছে। পরবর্তীতে আবারও নদী ভাংগনের কবলে পড়লে ১৯৪০ এর দশকে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরিত হয়ে বর্তমান অবস্থানে ২.০৮ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আড়িয়াল খাঁ নদীর দক্ষিণ পাড়ে হযরত শাহ্ মাদার (রহঃ) এর দরগা শরীফের (যাঁর নামে মাদারীপুরের নামকরন করা হয়েছে) মাত্র ১০০ গজ দক্ষিনে বিদ্যালয়টি অবস্থিত। এর উত্তরে ৫০ গজ দুরে অবস্থিত সরকারি সুফিয়া মহিলা কলেজ। চারিদিকে ছায়া সুনিবিড় নির্জন গ্রাম্য পরিবেশ। এরই মাঝে শতবর্ষী বিদ্যালয়টি দাঁড়িয়ে আছে গর্বোন্নত এক অনন্য স্বকীয় মহিমায়।
২০১৩ শিক্ষাবর্ষে মোট ছাত্রী সংখ্যাঃ ১৫১৯ জন
ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা (শ্রেণি ভিত্তিক)ঃ
শ্রেণী | চতুর্থ | পঞ্চম | ষষ্ঠ | সপ্তম | অষ্টম | নবম | দশম |
ছাত্রী সংখ্যা | ৯৯ | ১০৫ | ২৭৪ | ৩০৬ | ২৭৫ | ২৫৪ | ২০৬ |
বিগত ৫ বছরের এস.এস.সি পরীক্ষার ফলাফলঃ
সন | অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা | উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা | পাশের হার | A+ এর সংখ্যা |
২০০৯ | ১৩৭ | ১১৫ | ৮৪% | ১৬ |
২০১০ | ১২৭ | ১২২ | ৯৬% | ১৭ |
২০১১ | ১১৩ | ১০৮ | ৯৫.৫৭% | ২০ |
২০১২ | ১৩৯ | ১৩৫ | ৯৮% | ২৪ |
২০১৩ | ১৩৮ | ১৩০ | ৯৩.৫% | ১২ |
বিগত ৩ বছরের জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলঃ
সন | ট্যালেন্টপুল বৃত্তি | সাধারণ বৃত্তি | মোট |
২০১০ | ৯ | ১৪ | ২৩ |
২০১১ | ১১ | ১২ | ২৩ |
২০১২ | ১৩ | ১৮ | ৩১ |
ডনোভান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মাদারীপুর।
ফোনঃ ০৬৬১-৬১৫২৩
E-mail: donovangovt.ghs14@yahoo.com
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস