Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

জেলা প্রশাসনের পটভূমি

মাদারীপুর একটি ইতিহাস সমৃদ্ধ জনপদ। পঞ্চদশ শতাব্দীর সাধক হযরত বদরুদ্দিন শাহ্ মাদার(রঃ) এর নামানুসারে এই জেলার নামকরণ করা হয়। প্রাচীনকাল থেকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বয়ে এসেছে আজকের এই মাদারীপুরের ইতিহাস।

প্রাচীন কাল থেকে ইংরেজ আমলের পূর্ব পর্যমত্মঃঅতি প্রাচীনকালে মাদারীপুরের নাম ছিল ইদিলপুর। ইদিলপুর চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের একটি উন্নত জনপদ ছিল। তখন এ অঞ্চলের প্রশাসনিক নাম ছিল নাব্যমন্ডল। কোটালীপাড়া ছিল বাংলার সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্র। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে ইদিলপুর ও কোটালীপাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল।গ্রিকবীর আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময় ৩২৭ খ্রিস্টপূর্বে কোটালীপাড়া অঞ্চলে গঙ্গাঁরিডি জাতি স্বাধীনভাবে রাজত্ব করত। তারপর এ অঞ্চল (৩২০-৪৯৬ খ্রিঃ) গুপ্তরাজাদের অধীনে ছিল। বাংলার স্বাধীন শাসক শশাঙ্কের মৃত্যুর পর একশত বছর(৬৫০-৭৫০ খ্রিঃ) বাংলার ইতিহাস ‘‘মাৎসায়ন’’ নামে খ্যাত। জোর যার মূল্লক তার চলতে থাকে। ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে গোপালকে রাজা নির্বাচিত করা হয়। পাল বংশ ৭৫০-১২২৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যমত্ম বাংলা শাসন করে।

চন্দ্রবংশ দশম ও এগার শতকে স্বাধীনভাবে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গ রাজত্ব করে। চন্দ্র বংশের শ্রীচন্দ্রের তাম্রশাসন রামপাল ইদিপুর ও কেদারপুরে পাওয়া যায়। মাদারীপুর-শরীয়তপুর চন্দ্ররাজার অধীনে ছিল। সেন বংশ ১০৯৮ হতে ১২২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যমত্ম পূর্ব বাংলা শাসন করে। কোটালীপাড়া ও মদনপাড়ায় বিশ্বরূপ সেন এবং ইদিলপুরে কেশব সেনের তাম্রলিপি পাওয়া যায়। প্রাচীনকালে মাদারীপুরের পূর্বাংশ ইদিলপুর এবং পশ্চিম অংশ কোটালীপাড়া নামে পরিচিত ছিল। সেন রাজাদের পতনের পর চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বরিশাল বিভাগ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাট জেলা চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের অধীনে ছিল।

চতুর্দশ শতকে ফরিদপুর সুলতানদের শাসনাধীনে চলে যায়। ১২০৩ থেকে ১৫৭৫ সাল পর্যমত্ম সুলতানগণ বাংলা শাসন করে। কিন্তু পূর্ববঙ্গে প্রায় একশ বছর সেন রাজত্ব চলে। সুলতান রুকনউদ্দীন বরবক শাহ (১৪৫৯-১৪৭৪ খ্রিঃ) প্রথম ফরিদপুর-চন্দ্রদ্বীপ দখল করেন। সুলতান জালাল উদ্দিন ফতেহ শাহ (১৪৮১-১৪৮৫ খ্রিঃ) ফরিদপুর ও চন্দ্রদ্বীপের একাংশ দখল করে ফতেহাবাদ পরগনা গঠন করেন। ফরিদপুর মাদারীপুরের প্রথম ঐতিহাসিক নাম ফতেহাবাদ। সুলতান হুসেন শাহ (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রিঃ) ফতেহাবাদের জনপ্রিয় শাসক ছিল। ১৫৩৮ হতে ১৫৬৩ সাল পর্যমত্ম শেরশাহ ও তার বংশধরগণ বাংলা শাসন করেন। ১৫৬৪ সাল হতে ১৫৭৬ সাল পর্যমত্ম কররানি বংশ বাংলার রাজত্ব করে তারপর ১৫৭৬ সাল হতে ১৬১১ সাল পর্যমত্ম বারভূঁইয়ার অধীনে ছিল বাংলা। বারভূঁইয়াদের অন্যতম ছিল ফরিদপুরের চাঁদ রায়, কেদার রায় এবং বাকলার রামচন্দ্র রায়। মোগল ও নবাবী শাসন চলে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যমত্ম। তারপর বাংলা ইংরেজদের দখলে চলে যায়।

ইংরেজ আমলঃ

১৭৫৭ সালে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌল্লাহর পতনের মধ্যদিয়ে এদেশে ইংরেজ শাসনের সূত্রপাত ঘটে। মূলত ১৭৬৫ থেকে ১৯৪৭ খ্রিঃ পর্যমত্ম প্রায় দু’শ বছর ইংরেজরা বাংলা শাসন করে। ১৮৫৪ সাল পর্যমত্ম মাদারীপুর স্থানীয় নাম ছিল। ১৮৫৪ সালে মহকুমা ও থানা সৃষ্টি হলে ’মাদারীপুর’ নাম প্রশাসনিক স্বীকৃতি লাভ করে। ইংরেজ আমলে মাদারীপুর অনেক আন্দোলন সংগ্রামের তীর্থভূমি ছিল। বিখ্যাত ফরায়েজি আন্দোলনের নেতা হাজি শরিয়ত উল্লাহ’র (১৭৮১-১৮৪০) জন্ম মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাহাদুরপুরে। তিনি ১৮২০ সাল থেকে ১৮৫০ সাল পর্যমত্ম ধর্মীয় কুসংস্কার, নীলকর ও জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। শরিয়ত উল্লাহর মৃত্যুর পর তাঁরই সুযোগ্য পুত্র দুদু মিয়া (১৮১৯-১৯৬২) ফরায়েজি আন্দোনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।

ইংরেজ আমলে উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মাদারীপুরের বিপ্লবীরা ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। এ জেলার কৃতী সমত্মান চিত্তপ্রিয় রায় চৌধুরী ১৯১৫ সালে বালেশ্বর যুদ্ধে ইংরেজ বাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে মৃত্যুবরণ করেন। বালেশ্বর যুদ্ধে নীরেন্দ্র নাথ দাশগুপ্ত ও মনোরঞ্চন সেনগুপ্ত বন্দী হন। বালেশ্বর জেলে তাদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়। এ জেলার অগ্নিপুরুষ অম্বিকাচরণ মজুমদার নিখিল ভারত কংগ্রেস-এর সভাপতি ছিলেন। তিনি আধুনিক ফরিদপুরের রূপকার ও বটে। ১৯৪৭ সালে বাংলা বিভক্ত হয়ে পূর্ববাংলা নামে পাকিসত্মানের একটি প্রদেশে পরিণত হয়।

 

পাকিসত্মানআমলঃ

১৯৪৭ সালে পাকিসত্মান সৃষ্টির পর পূর্ব বাংলার জনগণের আশা আকাঙক্ষা ও স্বপ্ন ধীরে ধীরে ভাঙ্গতে শুরু করে। পাকিসত্মানের প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার জনগণকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে নিজেদের ক্ষমতা সংহত করার চেষ্টা চালায়। এদশের জনগণ সমসত্ম শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন এবং উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান এবং সর্বোপরি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধসহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে মাদারীপুরের কৃতী সমত্মানরা বলিষ্ট ভূমিকা পালন করে।

 

স্বাধীন বাংলাদেশঃ

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। স্বাধীনতার পর থেকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আজ আমরা এখানে এসে পেঁŠছেছি। মাদারীপুর ১৮৫৪ সালে মহকুমা হিসেবে ঘোষিত হওয়ার দীর্ঘদিন পর ১৯৮৪ সালে জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। মূলত: মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের শুরু এখান থেকেই। মাদারীপুর জেলা প্রশাসন বলতে গেলে এখন শৈশব ছেড়ে যৌবনে পদার্পন করেছে মাত্র। বয়সে নবীন হলেও অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন তাঁর সমসত্ম শক্তি, সম্পদ ও সম্ভাবনা নিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর।